বৃহস্পতিবার, ১৫ মে, ২০২৫

মিথ্যে কথা (কবিতা) – শঙ্খ ঘোষ

 


লোকে আমায় ভালোই বলে দিব্যি চলনসই

দোষের মধ্যে একটু নাকি মিথ্যে কথা কই।
ঘাটশিলাতে যাবার পথে ট্রেন-ছুটছে যখন
মায়ের কাছে বাবার কাছে করছি বকম বকম।
হঠাৎ দেখি মাঠের মধ্যে চলন্ত সব গাছে
এক একরকম ভঙ্গি ফোটে এক একরকম নাচে।
“ওমা , দেখো নৃত্যনাট্য” -যেই বলেছি আমি
মা বকে দেয় , “বড্ড তোমার বেড়েছে ফাজলামি।”
চিড়িয়াখানার নাম জানো তো আমার সেজ মেসোর
আদর করে দেখিয়ে দিলেন পশুরাজের কেশর।
ক’দিন পরে চুন খসানো দেয়াল জুড়ে এ কী
ঠিক অবিকল সেইরকমই মূর্তি যেন দেখি ?
ক্লাসের মধ্যে যেই বলেছি সুরঞ্জনার কাছে
“জানিস ? আমার ঘরের মধ্যে সিংহ বাঁধা আছে !”
শুনতে পেয়ে দিদিমণি অমনি বলেন “শোন ,
এসব কথা আবার যেন না শুনি কখনো।”

বলি না তাই সে সব কথা সামলে থাকি খুব
কিন্তু সেদিন হয়েছে কি এমনি বেয়াকুব-
আকাশপারে আবার ও চোখ গিয়েছে আটকে
শরৎ মেঘে দেখতে পেলাম রবীন্দ্রনাথকে।

মঙ্গলবার, ১৩ মে, ২০২৫

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরঃ প্রেমের দূতকে পাঠাবে নাথ কবে

 


প্রেমের দূতকে পাঠাবে নাথ কবে।

সকল দ্বন্দ্ব ঘুচবে আমার তবে।

 

       আর-যাহারা আসে আমার ঘরে

       ভয় দেখায়ে তারা শাসন করে,

           দুরন্ত মন দুয়ার দিয়ে থাকে,

               হার মানে না, ফিরায়ে দেয় সবে।

 

সে এলে সব আগল যাবে ছুটে,

সে এলে সব বাঁধন যাবে টুটে,

    ঘরে তখন রাখবে কে আর ধরে

        তার ডাকে যে সাড়া দিতেই হবে।

 

       আসে যখন, একলা আসে চলে,

       গলায় তাহার ফুলের মালা দোলে,

           সেই মালাতে বাঁধবে যখন টেনে

               হৃদয় আমার নেরব হয়ে রবে।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরঃ নামাও নামাও আমায় তোমার

 নামাও নামাও আমায় তোমার

                    চরণতলে,

       গলাও হে মন, ভাসাও জীবন

                    নয়নজলে।

                           একা আমি অহংকারের

                                  উচ্চ অচলে,

                           পাষাণ-আসন ধুলায় লুটাও,

                                         ভাঙো সবলে।

                           নামাও নামাও আমায় তোমার

                                         চরণতলে।

 

       কী লয়ে বা গর্ব করি

                    ব্যর্থ জীবনে।

       ভরা গৃহে শূন্য আমি

                    তোমা বিহনে।

                           দিনের কর্ম ডুবেছে মোর

                                         আপন অতলে

                           সন্ধ্যাবেলার পূজা যেন

                                         যায় না বিফলে।

                           নামাও নামাও আমায় তোমার

                                         চরণতলে।

 

 

    রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরঃ সভা যখন ভাঙবে তখন

      সভা যখন ভাঙবে তখন

                  শেষের গান কি যাব গেয়ে।

           হয়তো তখন কণ্ঠহারা

                  মুখের পানে রব চেয়ে।

           এখনো যে সুর লাগে নি

           বাজবে কি আর সেই রাগিণী,

           প্রেমের ব্যথা সোনার তানে

                  সন্ধ্যাগগন ফেলবে ছেয়ে?

     

                                      এতদিন যে সেধেছি সুর

                                             দিনেরাতে আপন-মনে

                                      ভাগ্যে যদি সেই সাধনা

                                             সমাপ্ত হয় এই জীবনে--

                                      এ জনমের পূর্ণ বাণী

                                      মানস-বনের পদ্মখানি

                                      ভাসাব শেষ সাগরপানে

                                             বিশ্বগানের ধারা বেয়ে।

    রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরঃ বিশ্ব যখন নিদ্রামগন

      বিশ্ব যখন নিদ্রামগন,

                  গগন অন্ধকার;

           কে দেয় আমার বীণার তারে

                  এমন ঝংকার।

           নয়নে ঘুম নিল কেড়ে,

                  উঠে বসি শয়ন ছেড়ে,

           মেলে আঁখি চেয়ে থাকি

                  পাই নে দেখা তার।র

     

                               গুঞ্জরিয়া গুঞ্জরিয়া

                                      প্রাণ উঠিল পুরে,

                               জানি নে কোন্‌ বিপুল বাণী

                                      বাজে ব্যাকুল সুরে।

                               কোন্‌ বেদনায় বুঝি না রে

                                      হৃদয় ভরা অশ্রুভারে,

                               পরিয়ে দিতে চাই কাহারে

                                      আপন কণ্ঠহার।



    সবিতাঃ জীবনানন্দ দাশের কবিতা

     

    সবিতা

    সবিতা, মানুষজন্ম আমরা পেয়েছি
    মনে হয় কোনো এক বসন্তের রাতে:
    ভূমধ্যসাগর ঘিরে যেই সব জাতি,
    তাহাদের সাথে
    সিন্ধুর আঁধার পথে করেছি গুঞ্জন;
    মনে পড়ে নিবিড় মেরুন আলো, মুক্তার শিকারী
    রেশম, মদের সার্থবাহ,
    দুধের মতন শাদা নারী।

    অনন্ত রৌদের থেকে তারা
    শাশ্বত রাত্রির দিকে তবে
    সহসা বিকেলবেলা শেষ হ’য়ে গেলে
    চ’লে যেত কেমন নীরবে।
    চারিদিকে ছায়া ঘুম সপ্তর্ষি নক্ষত্র;
    মধ্যযুগের অবসান
    স্থির ক’রে দিতে গিয়ে ইওরোপ গ্রীস
    হতেছে উজ্জ্বল খ্রীষ্টান।

    তবুও অতীত থেকে উঠে এসে তুমি আমি ওরা—
    সিন্ধুর রাত্রির জল জানে—
    আধেক যেতাম নব পৃথিবীর দিকে;
    কেমন অনন্যোপায় হাওয়ার আহ্বানে
    আমরা আকুল হ’য়ে উঠে
    মানুষকে মানুষের প্রয়াসকে শ্রদ্ধ করা হবে
    জেনে তবু পৃথিবীর মৃত সভ্যতায়
    যেতাম তো সাগরের স্নিগ্ধ কলরবে।

    

    এখন অপর আলো পৃথিবীতে জ্বলে;
    কি এক অপব্যয়ী অক্লান্ত আগুন!
    তোমার নিবিড় কালো চুলের ভিতরে
    কবেকার সমুদ্রের নুন;
    তোমার মুখের রেখা আজো
    মৃত কতো পৌত্তলিক খ্রীষ্টান সিন্ধুর
    অন্ধকার থেকে এসে নব সূর্যে জাগার মতন;
    কতো কাছে— তবু কতো দূর।

    সুরঞ্জনাঃ জীবনানন্দ দাশের কবিতা

     সুরঞ্জনা

    সুরঞ্জনা, আজো তুমি আমাদের পৃথিবীতে আছো;
    পৃথিবীর বয়সিনী তুমি এক মেয়ের মতন;
    কালো চোখ মেলে ওই নীলিমা দেখেছো;
    গ্রীক হিন্দু ফিনিশিয় নিয়মের রূঢ় আয়োজন
    শুনেছো ফেনিল শব্দে তিলোত্তমা-নগরীর গায়ে
    কী চেয়েছে? কী পেয়েছে? —গিয়েছে হারায়ে।

    বয়স বেড়েছে ঢের নরনারীদের
    ঈষৎ নিভেছে সূর্য নক্ষত্রের আলো;
    তবুও সমুদ্র নীল; ঝিনুকের গায়ে আলপনা;
    একটি পাখির গান কী রকম ভালো।
    মানুষ কাউকে চায়— তার সেই নিহত উজ্জ্বল
    ঈশ্বরের পরিবর্তে অন্য কোনো সাধনার ফল।

    মনে পড়ে কবে এক তারাভরা রাতের বাতাসে
    ধর্মাশোকের ছেলে মহেন্দ্রের সাথে
    উতরোল বড়ো সাগরের পথে অন্তিম আকাঙ্ক্ষা নিয়ে প্রাণে
    তবুও কাউকে আমি পারিনি বোঝাতে
    সেই ইচ্ছা সঙ্ঘ নয় শক্তি নয় কর্মীদের সুধীদের বিবর্ণতা নয়,
    আরো আলো: মানুষের তরে এক মানুষীর গভীর হৃদয়।

    যেন সব অন্ধকার সমুদ্রের ক্লান্ত নাবিকেরা
    মক্ষিকার গুঞ্জনের মতো এক বিহ্বল বাতাসে
    ভূমধ্যসাগরলীন দূর এক সভ্যতার থেকে
    আজকের নব সভ্যতায় ফিরে আসে;
    তুমি সেই অপরূপ সিন্ধু রাত্রি মৃতদের রোল
    দেহ দিয়ে ভালোবেসে, তবু আজ ভোরের কল্লোল।

    মিথ্যে কথা (কবিতা) – শঙ্খ ঘোষ

      লোকে আমায় ভালোই বলে দিব্যি চলনসই দোষের মধ্যে একটু নাকি মিথ্যে কথা কই। ঘাটশিলাতে যাবার পথে ট্রেন-ছুটছে যখন মায়ের কাছে বাবার কাছে করছি বকম ব...